ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার নামকরণ সম্পর্কে ইতিহাস থেকে কোন সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। যার ফলে এ উপজেলার নামকরণ সস্পর্কে যেসব তথ্য উদঘাটন করা হয়েছে সেগুলোর কোন লিখিত দলিল না থাকায় এর সত্যতা যাচাই করে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি। তবে বর্তমান সংসদ সদস্য মহোদয়ের পিতা নুরপুর গ্রামের বাসিন্দা জনাব দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী কর্তৃক প্রণীত ফেঞ্চুগঞ্জ অঞ্চলের গৌরবময় পুরাতত্ত্ব বিষয়ক পুস্তিকার উদ্ধৃতি অনুযায়ী জানা যায় যে পূর্বকালে পরগণার বাজার, পিটাইটিকর ও কুশিয়ারা নদীর দক্ষিণ পাড়ের মধ্যবর্তী বর্তমান ছুরপান আলীর বাড়ির পার্শ্বে ছিল। তখন স্টিমার পথ বা রেলপথ ছিল না। বর্ষাকালে চর্তুদিকে পানি থাকত। এছাড়াও নানাবিধ কারণে পরগণাবাসী বাজার স্থানান্তরের প্রয়োজন অনুভব করেণ। তখন ফেঞ্চুগঞ্জের বর্তমান পূর্ববাজারের স্থান নির্ধারণ করা হয়। তৎকালীন সময়ে ঐ স্থানের মালিকগণ পরগণাবাসীকে বাজারের জন্য বারআনা মালিকানা স্বত্ব দান করেন। ইন্দানগর পরগণার ফরিদপুর মৌজায় ব্রাক্ষণবাড়িয়া সংলগ্ন দক্ষিণে যে ছাড়া বাড়ি আছে ঐ বাড়ির বাসিন্দা ফেঁচুরাম বৈদ্য নামক এক ব্যক্তির একটি মাত্র দোকান ঐ স্থানে পূর্বে থেকে চালু ছিল। ঐ ফেঁচুরাম এর নাম অনুসারে উক্ত স্থানের নাম লোকজনের অজ্ঞাতসারেই ফেঁচুগঞ্জ নাম পরিচিতি হতে থাকে; পরবর্তীতে ফেঁচুগঞ্জকে ফেঞ্চুগঞ্জ নামকরণ করা হয়।
এছাড়াও এলাকায় বিভিন্ন জনশ্রুতি রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম দুটি হচ্ছে -
১। বর্তমান উপজেলা ভূমি অফিসের আশেপাশে কোন এক স্থানে জেলে, কৃষকদের নিত্য প্রয়োজনীয় তামাক, চিড়া, গুড়, মুড়ি ইত্যাদির পশরা নিয়ে ফেঁচু নামের এক ব্যক্তির ঝুপড়ি ঘরের মত এক দোকান ছিল। ঐ দোকানদার ব্যক্তির নামানুসারে ফেঁচুগঞ্জ, যা পরবর্তীতে ফেঞ্চুগঞ্জ নামকরণ করা হয়।
২। অপর জনশ্রুতি হচ্ছে হযরত শাহ মালুম (রাঃ) এর মাজারের একজন খাদেম ছিলেন পেঁচু শাহ বা ফেঁচুই শাহ। তিনি প্রতিদিন বিকাল বেলা কুশিয়ারা নদীর ঘাটে এসে বসতেন। পরে এখানে দোকানপাট গড়ে উঠলে এর নাম ফেঁচুগঞ্জ রাখা হয়। পরবর্তী সময়ে ফেঁচুগঞ্জ এর নাম সংশোধন করে ফেঞ্চুগঞ্জ রাখা হয়।
ভৌগলিক অবস্থান ঃ পূর্বে সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলা। পশ্চিমে সিলেট জেলার বালাগঞ্জ উপজেলা। উত্তরে সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা। দক্ষিণে মৌলভী বাজার জেলার রাজনগর ও কুলাউড়া উপজেলা।
বর্তমান উপজেলার ইতিহাস ঃ ব্রিটিশ শাসিত ভারতের অন্যতম জাহাজ কোম্পানী ওএঘ ড়ভ জ.ঝ.ঘ (ওহফরধহ এবহবৎধষ ঘধারমধঃরড়হ ড়ভ জরাবৎ ংুংঃবস ঘধারমধঃরড়হ ঈড় খঞউ) এর জাহাজ মেরামত কেন্দ্র ছিল কুশিয়ারা তীরবর্তী ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা। ১৯২২ সালের ১০ জানুয়ারি তিনটি ইউনিয়ন নিয়ে ফেঞ্চুগঞ্জ একটি থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালের ২ জুলাই বাংলাদেশের অন্যান্য থানার সাথে এক প্রশাসনিক আদেশে ইহা উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। বর্তমানে এ উপজেলায় নতুন দুইটি ইউনিয়নসহ মোট পাঁচটি ইউনিয়ন রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বর্তমান কার্যালয়টি ছিল ওএঘ ড়ভ জ.ঝ.ঘ জাহাজ মেরামত কোম্পানীর এজেন্ট এর বাংলো। বর্তমান উপজেলা নির্বহিী অফিসারের বাসভবনটি ছিল জাহাজ কোম্পানীর ইঞ্জিনিয়ার এর বাসা। কালের বিবর্তনে জাহাজ কোম্পানী ও জাহাজ কোম্পানীর ইঞ্জিনিয়ার এর বাংলো (উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাসা) কে কেন্দ্র করে এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিদের নিকট অনেক গল্প প্রচলিত আছে। অনেকে এ কার্যালয়কে “ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর অফিস” হিসেবে অবহিত করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিস ভবনটি বর্তমানে ব্যবহার উপযোগী হলেও প্রশাসনিক ঐতিহ্য হিসেবে একে সংরক্ষণ করা একান্ত অপরিহার্য যাতে করে পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের অতীত ইতিহাস নিদর্শন প্রত্যক্ষ করতে পারে।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS